Brands
Discover
Events
Newsletter
More

Follow Us

twitterfacebookinstagramyoutube
Youtstory

Brands

Resources

Stories

General

In-Depth

Announcement

Reports

News

Funding

Startup Sectors

Women in tech

Sportstech

Agritech

E-Commerce

Education

Lifestyle

Entertainment

Art & Culture

Travel & Leisure

Curtain Raiser

Wine and Food

YSTV

ADVERTISEMENT
Advertise with us

বলিউডের রেড কার্পেটে রোহণের জুতোই জেল্লা

বলিউডের রেড কার্পেটে রোহণের জুতোই জেল্লা

Thursday October 12, 2017 , 5 min Read

কে জানত জুতোর প্রতি ভালোবাসাই কেরিয়ার গড়ে দেবে রোহণ অরোরার? সেন্ট জেভিয়ার্সের কমার্সের প্রাক্তনী পড়াশোনা শেষ করে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেবেন, না কী করবেন ঠাওর করে উঠতে পারছিলেন না। ২০০৭ সাল নাগাদ স্টার্টআপ কালচার সবে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে। অরোরার সঙ্গী সাথীরা সবাই নিজেরা কিছু করার কথা ভাবছিলেন। অরোরাও ভাবতেন ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কোনও বিজনেস আইডিয়া পেয়ে যাবেন। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে চলে এলো আইডিয়া। জুতো বানাবেন, ঠিক করে ফেললেন।

image


যতটা সহজে বললাম ঠিক ততটাও সহজ ছিল না সিদ্ধান্ত নেওয়া। দুটি ঘটনার কথা বললেন রোহণ। ‘বোনের বিয়ে ছিল। সাজগোজ শেষ করে স্টেজে উঠতে যাবে ঠিক তখন দামি জুতোর হিলটাই ভেঙে গেল। প্রচণ্ড বিব্রত দেখাচ্ছিল আমার বোনটিকে। আরেকবার নিজের জন্য জুতো কিনতে গিয়ে দেখেছিলেন তিন মহিলা বিয়ের শপিংয়ে এসেছেন। যা চাইছিলেন তেমন জুতো স্টকে নেই। হিল আছে তো রং নেই রং আছে তো সাইজ নেই, সাইজ আছে তো স্টাইল পছন্দ নয়। শ’খানেক জুতো দেখার পর খালি হাতে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল ওদের’, এসব থেকে থেকে কাস্টমাইজিং জুতো তৈরির কথা ভাবতে শুরু করেন রোহণ। রিসার্চ করেন রীতিমতো। তাও সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। ঠিক করলেন জুতোর কোনও কারখানায় কাজ নেবেন। ‘সিআইটি রোডের ছোট্ট একটা কারখানায় গিয়ে দু’দিন হত্যে দিয়ে পড়ে থাকলেন। ওদের বলেন কাজ শিখতে চান। সবে কলেজ পাশ করেছেন। ইংরেজি বুলি কেউ পাত্তাই দিল না। একরকম তাড়িয়েই দিল। কিন্তু উপায় একটা বের করতেই হত। 

একদিন ভোরে ছেঁড়া সর্টস আর ততোধিক ছেঁড়া টিশার্ট পরে ছদ্মবেশে হাজির হলেন চার বাই ৬ ফুটের এক কারখানায়। মিথ্যে গল্পও ফাঁদতে হল। বললেন মা অসুস্থ, বাড়িতে অন্ধ বোন, টাকার খুব দরকার। সপ্তাহে ২০০ টাকা বেতনে অবশেষে কাজটা ম্যানেজ করেন। ফাঁকা সময়ে বাকিদের ফরমায়েশ খাটতেন, চা বিড়ি এনে দিতেন। আর কাজ ছিল কেরোসিন আর একটি নোংরা কাপড় দিয়ে রেক্সিন পালিশ করা। 

ধীরে ধীরে ওখানেই কাজ শিখতে থাকেন, পুরনো দিনের এসব কথা গল্পের মত বলছিলেন রোহণ। নিজে রিসার্চ করেছেন, ছদ্মবেশে কারখানায় কাজ শিখতে গিয়েছেন অথচ কোনও ডিজাইন স্কুলে পাঠ নেওয়ার কথা ভাবেননি একবারও। কারণ, রোহণ মনে করেন, ডিজাইন অনেকটা নাচের মতো। স্টেপ শিখিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু কেউ শেখাতে পারে না কীভাবে নাচতে হয়।

কিছুদিন পর সাহস করে কাজে নেমে পড়েন। এক আত্মীয়ের ছোট্ট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে মাত্র একজন কারিগর দিয়ে শুরু হয় তাঁর মিশন। প্রথম অর্ডার ছিল এসি মার্কেটের একটি দোকানের জন্য ১২৮ জোড়া জুতো তৈরি করে দেওয়ার। সেই ঠিক ঠাক শুরু। ধীরে ধীরে শ্রীলেদারস, অজন্তা, খাদিমসের মতো স্থানীয় ব্র্যান্ডের জুতোর অর্ডার আসতে থাকে। একটু থিতু হতেই পিকনিক গার্ডেনে প্রথম ওয়ার্কশপ এবং রিটেল আউটলেট খুলে ফেলেন। অনেকটা সাবওয়ের বার্গারের মতো। রং, সোল, লেদারের টেক্সচার, হিল, স্টাইল, এমব্রয়ডারি সব নিজের পছন্দের। প্রথম প্রথম তো কাস্টমারকে কোনও পরামর্শও দিতেন না। সব ওদের ওপর ছেড়ে দিতেন। কারণ তখনও ওর মনে হত পরামর্শ দেওয়ার মতো জ্ঞান নেই। দক্ষিণ কলকাতার কোনও এক ঘুপচিতে কাস্টমাইজড জুতোর কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে লোকের মুখে মুখে। ২০০৮ সালে লেকমে ফ্যাশন উইকের এক ডিজাইনার রিমি নায়েক রোহণের কাছে জুতোর অর্ডার নিয়ে আসেন। ছ’ জোড়া জুতো বানিয়ে দেন পকেটের টাকা গচ্চা দিয়ে। আর তাঁর তৈরি জুতো লেকমে ফ্যাশন উইকে যাবে ভেবেই এক্সাইটেড হয়ে পড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্য শো-এর দিন জুতোর জিপার গেল বিগড়ে! ওকে জানানো হলেও কলকাতায় বসে কিছু করার ছিল না। রিমি অবশ্য সেই নিয়ে কারও কাছে অনুযোগ করেননি কখনও, আজও রোহণ কৃতজ্ঞ রিমির কাছে।

এরপরও স্থানীয় দোকানগুলির অর্ডার পড়তে থাকে কাস্টমাইজড জুতোর জন্য। এরমধ্যেরই ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়য়ের সঙ্গে কাজের সুযোগ আসে। ফোনটা রোহণই করেছিলেন। কিন্তু অতবড় ডিজাইনার অত সহজে ফোনটা ধরবেন ভাবতেই পারেননি। 

উনি ফোন ধরলেন, কথা বললেন এবং কয়েকটা প্রশ্ন করার পর বললেন ‘গুজারিশ’ ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাইয়ের জন্য যদি জুতো ডিজাইন করে দিতে পারে রোহণ। শুনেই রোহণ অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। 

দুনিয়ার সবথেকে সুন্দর পায়ের পাতা ঢাকার কাজ পাবেন... স্বপ্নেও ভাবেননি। সব্যসাচীর সঙ্গে জুটি বাঁধার গল্প শোনাচ্ছিলেন জুতোর ডিজাইনার। ২০১৫ পর্যন্ত সব্যসাচীর ব্র্যান্ডের জন্য জুতো তৈরি করেছেন অরোরা। এরই মধ্যে অরোরার কানে আসে লেকমে ফ্যাশন উইকে অ্যাক্সেসরিজ সেগমেন্ট আসতে চলেছে। দেরি না করে স্যাম্পল পাঠিয়ে দেন। চেন্নাই থেকে লেদার আনিয়ে তাতে কলমকারি এবং খাদির পাঞ্চ। আর ছিল হাতে আঁকা ‘শোলে’র বাসন্তী—বীরুর ছবি-ডায়লগ। বেশ বোকা বোকা মনে হয়েছিল। কিন্তু ওটাই ক্লিক করে যায়। যা সাড়া পেয়েছিলেন নিজেকে রীতিমত রকস্টার মনে হচ্ছিল, বলছিলেন রোহণ। কলকাতার সেলেব্রিটিদের কাছ থেকে অর্ডার আসতে শুরু করল। একসময় অর্ডার সামলানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। এবার রোহণ মন দিলেন ব্যবসা বাড়ানোয়। বালিগঞ্জ প্লেসে ৩ রুমের ফ্ল্যাগশিপ স্টোর খোলেন, রাজস্থানি ইন্টিরিয়র, দেওয়ালে গাড় বাদামি রঙে মরোক্কান ফিল আর তাকগুলি ঝরোখা স্টাইলে সাজানো। তিনি চেয়েছিলেন শোরুম জুতোর মক্কার মতো দেখাবে। তাই মধ্যপ্রাচ্য থেকে মুঘল আমলের শিল্পের ছোঁয়া, জয়পুর, রাজস্থানের নানা কাজ দিয়ে সাজানো। আসলে মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতের মিশেল আনতে চেয়েছিলেন রোহণ।

বলিউডেও নিজের জায়গা করে নিয়েছেন ‘মিস্টার হ্যাপি ফিট’। মণীষ মালহোত্রা থেকে রোহিত বাল, রাঘবেন্দ্র রাঠোর নামী ডিজাইনাররা ব়্যাম্পে হাঁটতে তাদের মডেলের জন্য রোহণের ডিজাইন করা জুতো নিয়ে যাচ্ছেন। বলিউড, টলিউডের তারকাদের অনেকেরই পায়ে এই তরুণ ডিজাইনারের জুতো।

অরোরা সব কালেকশনের পেছনে তাঁর নিজের কোনও না কোনও সময়ের ছাপ রয়েছে। বলিউডের পোকা অরোরার প্রথম কালেকশন ছিল ‘নয়া দুয়ার’, বলিউডকে উৎসর্গ করে। জুতোয় হাতে আঁকা বলিউড পোস্টার অন্যদের থেকে আলাদা করে দিয়েছিল। দ্বিতীয় কালেকশন ‘কাল আজ অউর কাল’। তৃতীয় কালেকশন ‘লীলা’, বড়বাজারে দাদুর বাড়ির নামে, যেখানে রোহণের জন্ম। চতুর্থ কালেকশন ‘আইটেম’। এই নামে পেছনে ডিজাইনারের যুক্তি ‘একসময় আমরা মজা করতে ভালোবাসি, যাই হচ্ছে হোক টাইপের। বলতে গেলে এই নামটা অনেকটা আমার বয়সের মতো। হৈ হুল্লোড়, কিছুতেই কিছু যায় আসে না। সেখান থেকে ধীর,স্থির’, কালেকশানের পেছনে কী রহস্য বলছিলেন রোহণ। জুতো অনেক হল। এবার হ্যান্ড-ব্যাগ আর ব্যাগ ডিজাইনেও হাত দিয়েছেন কলকাতার এই স্বশিক্ষিত ডিজাইনার। জুতোর মতই ব্যাগেও সমান সফল হবেন বলে তিনি আশাবাদী।