এগারো দিন মুখ দিয়ে এঁকে গিনেস বুকে শুভদীপ
৫ বছর বয়সে দেওয়ালে রবীন্দ্রনাথ এঁকে পুঁচকে ছেলেটা চমকে দিয়েছিল সবাইকে। সেটা ছিল চমকের শুরু। ছেলেটার কাণ্ড দেখে অবাক বনে গিয়েছেন গিনেসবুকের হত্তা কত্তারা। মুখ দিয়ে তুলির টানে হাজার স্কোয়ার ফুটের ক্যানভাস এঁকে ফেলা চাট্টিখানি কথা তো নয়। মাত্র একুশ বছর বয়সে সেটাই করে দেখিয়েছে শুভদীপ চট্টোপাধ্যায়। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলে নিয়েছেন বিস্ময় যুবক। রেকর্ডের নেশা চেপে বসেছে। এবার অন্য কীর্তি নিয়ে আবার গিনেস বুকে নাম তুলতে চান। শুভদীপের সেই আশ্চর্য কীর্তি চলুন শোনা যাক।
ছোটবেলা থেকে আঁকার শখ। খাতা, পেন, পেন্সিল, কাগজ একসঙ্গে হলেই কেমন জানি করে ওর মন। যেখানে যা দেখতেন এঁকে ফেলতেন। কলেজে যখন পড়তেন তখন আঁকার সঙ্গে অন্য নেশা পেয়ে বসে। গিনেস বুকের রেকর্ড নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই খেয়ালটা মাথায় চাপে। সবাই হাতে আঁকে উনি না হয় মুখ দিয়ে আঁকবেন। রেকর্ড হয়ে যেতে পারে। তখনও ভাবতেই পারেননি সত্যিই ওর নামটা ওখানে জ্বলজ্বল করবে। ছোট্ট গড়ন, দোহারা চেহারা, সদা হাস্য মুখে এখনও কাটেনি বিস্ময়ের ঘোর। আপাত সাদামাটা ছেলেটাই মিরাকেল পার্সোনালিটি। হাত থাকতেও মুখে তুলি ধরে অনায়সে ছবি এঁকে ফেলেন। সময়টা ২০১৩ সাল ১০০০ স্কোয়্যার ফিটের ক্যানভাসে ১১ দিন ধরে মুখ দিয়ে ছবি এঁকেছিলেন শুভদীপ। ব্যাস, ওয়ার্ল্ড রেকর্ড আর যায় কোথায়? লিমকা বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, ইন্ডিয়ান বুক অব রেকর্ড, ইউনিভার্সাল রেকর্ড সব শেষে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনটাকি স্টেটের সম্মান কর্নেল পেয়েছেন এই অবাক করা যুবক।
ছবি আঁকতে ভালোই লাগত। বলছিলেন তবুও কখনও কোনও প্রাতিষ্ঠানিক তালিম নেননি। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাল্টিমিডিয়া পরে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত কলায় ডিগ্রি লাভের পর শুরু হয় আঁকা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা। অতবড় ক্যানভাস সামলানো বেশ কঠিন ব্যাপার। প্রথমে সেটআপ রেডি করা। তারপর গিনেস বুকে রেকর্ড করতে হলে তাদের গাইডলাইন মেনে চলতে হয়। খরচও অনেক। দামি বিদেশি অ্যাক্রেলিক আনিয়ে দেন বাবা। ১১ দিন ধরে সেই রঙে আঁকা বেশ ব্যয় সাপেক্ষ। অথচ তার জন্য কোনও স্পনসর পাওয়া যায় না। কিন্তু লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। তাই সাফল্য ধরা দিয়েছিল, বলছিলেন শুভদীপ।
২০১৩ সালে রেকর্ডের পর থেকে টেলেন্টেড ওয়ার্ল্ড দেখে মুগ্ধ তরুণ এই শিল্পী। নিজেই নেমে পড়েন নিজের দেশের প্রতিভার খোঁজে। বর্তমানে ইউনিভার্সাল রেকর্ড ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভদীপ। শুধু নিজে রেকর্ড গড়ে চুপচাপ বসে থাকতে চান না। রেকর্ড ঘাঁটতে গিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। আনাচে কানাচে কত প্রতিভা ছড়িয়ে রয়েছে অথচ স্বীকৃতি নেই। শুধু পরিকাঠামো আর অর্থাভাবের কারণে সেইসব প্রতিভা সামনে আসে না। অনেক সময় সঠিক সুযোগেরও অভাব থাকে। রাজ্যেও অনেক প্রতিভা রয়েছে। তাদের খুঁজে বিদেশের আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিতে চান।